ঢাকা , শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫ , ১০ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দুমকিতে ভুল রিপোর্টে শিশুর বিপদ সরকারি চিকিৎসক বেসরকারি ডায়াগনস্টিক ব্যবসার মালিক


আপডেট সময় : ২০২৫-০৭-২৪ ২৩:০৭:৫১
দুমকিতে ভুল রিপোর্টে শিশুর বিপদ সরকারি চিকিৎসক বেসরকারি ডায়াগনস্টিক ব্যবসার মালিক দুমকিতে ভুল রিপোর্টে শিশুর বিপদ সরকারি চিকিৎসক বেসরকারি ডায়াগনস্টিক ব্যবসার মালিক
 

মনজুর মোর্শেদ তুহিন, পটুয়াখালী। 
 

পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলায় এক শিশুর ভুল রোগ নির্ণয়ের ঘটনায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ভয়াবহ দুর্বলতা ও অনিয়ম উঠে এসেছে। ৬ বছর বয়সী নাজিফা আক্তারকে নিয়ে তার দাদি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে গিয়ে পড়েছেন চরম হয়রানিতে। স্থানীয় ডায়াগনস্টিক সেন্টার “নিউ লাইফ ডিজিটাল মেডিকেল সার্ভিসেস” ভুল রিপোর্ট দিয়ে শিশুটিকে মরণঘাতী চিকিৎসার মুখে ঠেলে দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

 
২০২৫ সালের ১৭ জুলাই, দুমকীর নিউ লাইফ ডিজিটাল মেডিকেলে (এএসও টাইটার) টেস্টে নাজিফার রিপোর্টে ৬০০ ভেলু দেখানো হয়, যেখানে স্বাভাবিক মাত্রা সর্বোচ্চ ২০০। শিশুর পরিবার দিশেহারা হয়ে বরিশালের জাহানারা ক্লিনিকে পরীক্ষার জন্য গেলে রিপোর্টে আসে স্বাভাবিক ভেলু ২০০। এরপরও আরো নিশ্চিত হওয়ার জন্য পানামা ডায়াগনস্টিক সেন্টারেও রিপোর্ট আসে ২০০। এতে নিশ্চিত হয় যে নিউ লাইফ ডিজিটাল মেডিকেলের রিপোর্ট ছিল ভুল।

 
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. এস এম মনিরুজ্জামান শাহীন জানান, ভুল রিপোর্ট অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক দিলে শিশুটি স্থায়ীভাবে বিকলাঙ্গ হতেও পারতো।
এ ঘটনায় নাজিফার দাদি মোসাঃ সখিনা আক্তার পটুয়াখালী জেলা সিভিল সার্জনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। 

 
অভিযোগ আরও গুরুতর আকার ধারণ করে যখন জানা যায়, এই প্রতিষ্ঠানের অন্যতম মালিক হচ্ছেন সরকারি দায়িত্বে থাকা দুমকী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (RMO) ডা. জি. এম. এনামুল হক। তিনি সরকারি দায়িত্বে থেকেও বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক, যেখানে রোগীদেরকে নিয়মিত নিজের প্রতিষ্ঠানে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি দুমকি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশেই দেয়াল ঘেষা।

 
এক শিক্ষার্থীর পরিবার অভিযোগ করে, নিউ লাইফের ভুল রিপোর্টের ভিত্তিতে চিকিৎসা নিয়ে ওই শিক্ষার্থী আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে বরিশালে আরেকটি ডায়াগনস্টিকে পরীক্ষা করলে দেখা যায়, টাইফয়েডের কোনো অস্তিত্বই নেই। চিকিৎসার ভুলে শিক্ষার্থীকে আইসিইউ পর্যন্ত নিতে হয়।

 
ভুক্তভোগীর স্বজনকে ডা. এনামুল হক হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। একটি অডিও ক্লিপে তাকে বলতে শোনা যায়: সিভিল সার্জন পর্যন্ত আমরাই চালাই। আমার শ্বশুর ড্যাবের জয়েন্ট সেক্রেটারি। বিভাগীয় ডিরেক্টর পর্যন্ত বদলি করে দিতে পারি। বর্তমান সিভিল সার্জন আওয়ামী লীগের লোক, কিছুই হবে না। তাদের টেস্টে যদি দুই টাকা খরচ হয় সেটা আমি ডায়াগনস্টিক থেকে ব্যবস্থা করে দেবো। ডায়াগনস্টিকের মালিক তো আমি একা না।আমি চাইতেছি নিজস্ব বিষয় নিয়ে যেন কোন কাদা ছোড়াছুড়ি না হয় এ নিয়ে আমি একটা সমাধান দিয়ে দেব। 

 
উপজেলা হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. মীর শহিদুল হাসান শাহীন বলেন, অনেক ডায়াগনস্টিকে অদক্ষ টেকনিশিয়ান রয়েছে, যার ফলে রিপোর্টে ভুল হয়।

 
ডায়াগনস্টিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মজিবুর রহমান টিটু বলেন, যদি কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টার ভুল করে, অ্যাসোসিয়েশন তার দায় নেবে না।

 
পটুয়াখালী জেলা সিভিল সার্জন ডা. খালেদুর রহমান মিয়া বলেন, ভুল রিপোর্ট সংক্রান্ত একটি অভিযোগ পেয়েছি যেটি তদন্ত এখনো চলমান। ডাঃ এনামুল হকের একটি অডিও ক্লিপ আমি শুনেছি, ব্যবস্থা নিতে হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নিবেন আমি তাদেরকে জানিয়েছি। 

 
দুমকি উপজেলায় বর্তমানে প্রায় ১৩টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে, যেখানে প্রতিদিন গড়ে দেড় থেকে দুই হাজার রোগ নির্ণয় পরীক্ষা হয়। এর মধ্যে নিউ লাইফ ডিজিটাল মেডিকেলের মতো প্রতিষ্ঠানে ভুল রিপোর্টের ঘটনা রোগীদের ভোগান্তি ও জীবন বিপন্ন করার মতো পরিস্থিতি তৈরি করছে।

 
এ ঘটনা আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো, দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় রাজনৈতিক প্রভাব, সরকারি কর্মকর্তার স্বার্থসংঘাত, এবং ব্যবসার নামে চিকিৎসা জগতের কলঙ্ক কেমন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে।




 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin

কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ